বিয়ের আজ ৩ বছর পর এই প্রথম আমি আমার বুড়ো
স্বামীকে রোমান্টিক হতে আর ঘুম থেকে
এতো তাড়াতাড়ি উঠতে দেখেছি। ব্যাপারটা আমার খুব
বেশি অবাক লেগেছে, কেননা যেই মানুষটাকে
সকাল ১০ টা বাজলে ও ঘুম থেকে উঠানো যায়না
সেই মানুষটায় আজ ভোর ৫ টায় ঘুম থেকে উঠে,
আলতো করে আমার কপালটাকে স্পর্শ করে
বলে উঠলো--- জুই এই জুই নামাজ পড়বেনা, তাড়াতাড়ি
উঠ।
কপালটা আজ হাতের আলতো স্পর্শ পেয়ে
হাতটাকে আকড়ে ধরে বেহিসাবেই ঘুমের
দেশে বিভর থাকলো, ঠিক তখনি হঠ্যাৎ কানের
কাছে এসে কেউ একজন যেনো বলে
উঠলো--- এই পাগলি আজকে চোখে এতো ঘুম
কেন, উঠ।
কথাটি শুনতেই এক লাফ দিয়ে বিছানায় বসে পড়লাম,
তারপর অনেকক্ষণ চোখ কচলাতে লাগলাম, হঠ্যাৎ
মনটা যেনো আমাকে প্রশ্ন করলো --- আচ্ছা
এভাবে তো কেউ আমাকে কখনো ঘুম থেকে
নামাজের জন্য ডাকেনি, প্রতিদিন অ্যালার্ম নামক
যন্ত্রের শব্দে সকালে আমার ঘুমটা ভাঈে, তারপর
আমি হাজারো জোর জবরদস্তি করে কিংবা বকে
আমার আনরোমান্টিক হ্যাজবেন্ডকে নামাজের জন্য
কখনো উঠাতে পারি তো আবার কখনো ওর
ঘুমের কাছে হেরে যাই, কিন্তু আজকে আমাকে
কে এতো সুন্দর করে ঘুম থেকে জাগালো?
এই প্রশ্নটার উওর পাওয়ার জন্য যখন আমি চোখ
খুলে সামনে তাকালাম , দেখলাম আমার একমাএ
আনরোমান্টিক হ্যাজবান্ড পান্জাবি আর টুপি,পড়ে এক
গাল হাসি দিয়ে আমার সামনে বসে আছে,
ব্যাপারটা দেখে প্রথমে আমি অনেকক্ষণ থ হয়ে
ওর পানে চেয়ে রইলাম,
বুড়োটাকে আজ পান্জাবি আর টুপিতে বেশ
দেখাচ্ছে, অবশ্য সুন্দর দেখাবেইনা কেন, উচা-
লম্বা, ফর্সা সুন্দর, দীঘল কালো কেশ আর মায়াবী
চেহারাযুক্ত, একজন মধ্যবয়স্ক পুরুষ যদি কালো
পান্জাবী আর সাদা টুপি পড়ে তাহলে তো সুন্দর
দেখারেই কথা।
এখন ও মনে আছে
বিয়ের পর সব বন্ধু- বান্ধব যখন আমার বরটাকে
দেখেছিলো, তখন আমাকে আমার বান্ধুবিরা
বলেছিলো -- জুই ভাগ্য করে এমন জামাই
পেয়েছিস, এতো স্মার্ট, কিউট চেহারার, সত্যিই তুই
অনেক লাকি, আর দেখ আমাদের জামাইদেরকে
এক- একটার কি বয়স, টাক্কু, আবার ডায়াবেটিস রোগী
তো কেউ, কেউ আবার হাই পেশারের, কেউবা
আবার লো পেশারের, শুধু টাকাই আছে আর তুই,
সবকিছুই পেয়েছিস।
বান্ধুবীদের এমন মন্তব্য শুনে সেদিন নিজেকে
খুব লাকি মনে হয়েছিলো । কিন্তু বিয়ের ২ মাসের
মধ্যেই বুঝতে পেরেছি আমার হ্যাজবেন্ড মহাশয়
বাইরে দিক দিয়ে ইয়াংগ হলে ও মনের দিক দিয়ে
কতটা বুড়ো, আর সেই থেকেই জনাবকে আমি
বুড়ো বলে ডাকি।
আমার জনাবের সকাল ১০ টা ছাড়া কখনোই ঘুম ভাঈে
না,
সকাল ১০ টায় ঘুম থেকে উঠে এক কাপ চা হাতে
পএিকা নিয়ে বসে , অতঃপর গোসলে যায়, তবে
গোসলে যাওয়ার আগে আমার বিছানাটাকে জামা-
কাপড়ের গোডাউন বানিয়ে রেখে যায়, আদাঘন্টা
আলমারি থেকে একটার পর একটা কোর্ট বের
করে দেখে কোনটা পড়লে ভালো লাগবে ,
তারপর সবথেকে ক্ষেত মার্কা আর ডিসকালারের
একটা কোর্ট পড়তে থাকে আর আমাকে বলে --
জুই দেখোতো তো আমায় কেমন লাগছে ?
আমি যদি তখন বলি --- কালারটা কেমন জানি, এটা
তোমাকে মানায় না,
তখন জনাব একটু মৃদু হাসি দিয়ে বলে উঠে--- আরে
বুড়ো হয়ে গেছি তো এখন আবার কিসের কালার
দেখবো।
প্রতিদিন একগাদা জামাকাপড় দিয়ে বিছানাটাকে গোডাউন
বানিয়ে তারপর একটা ক্ষেত কালার চুজ করে এই
ডায়লোগটা যখন দেয় মন চায় জামাকাপড় গুলোতে
আর জনাবের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেই।
ওর এমন কথায়
কিছুনা না বলে চুপচাপ, একটা মুখ বেচকি মেরে রুম
থেকে রান্না ঘরে যখন চলে আসার জন্য ব্যস্ত
হয়ে পড়ি, তখন মন বারবার বলে -- এই বুঝি মানুষটি
আমাকে জিজ্ঞাসা করবে -- জুই রাগ করছো।
কিন্তু না, মানুষটি একবার ও আমাকে ভুল করে ও পিছু
ডাকেনা, কিংবা কখনো বলে ও না --- জুই রাগ করছো।
সকালের নাস্তা বানিয়ে যখন উপরে যাই জনাবকে
ডাকতে, তখন গিয়ে দেখি, জনাব মাথায় একগাদা সরিষার
তেল দিয়ে সিথি করে আয়নার পানে চেয়ে
রয়েছে, প্রচন্ড রাগে যখন ঘরে ঢুকি তখন নিচের
দিকে তাকাতেই দেখি মেঝেতে জনাব শরীর
মুছে তোয়ালটা ফেলে রেখেছে আর সাথে
২,৩ টা শার্ট ।তোয়ালটা তুলতে-- তুলতে হাজার বকি ---
এতো অগোছালো কেন তুমি, একটু এগুলো
গুছিয়ে রাখলে কি হয়।
জনাব তখন আমাকে বলে,
--কি করবো বলো বুড়ো হয়ে গেছিতো।
এই বাক্যটা যখন শুনি মন চায়, একটা লাঠি হাতে ধরিয়ে
দিয়ে বলতে --- ওই বুড়ো এটা নিয়ে হাট। কিন্তু
কিভাবে যে রাগটাকে কন্ট্রোল করি উফ।
তারপর নাস্তা খেতে যখন বসে একবার ও বলেনা, তুমি
খাইছো, নিজে আনমনে খেয়ে চলে যায়,
এইযে বের হলো যাওয়ার সময় একবার ও বলেনা --
আসি,
আর সারাদিন, ঠিক করে একটা ফোন ও দেয়না।
তারপর রাতে যখন বাড়ি ফিরে, দ্রুত রুমে ঢুকেই
বিছানার উপর বসে পায়ের জুতোটি খুলে একটা
মেলায় ঘরের উওর পাশে তো আরেকটা দক্ষিণ
পাশে, আর কোর্টটাকে?
বিছানায় ফেলে রেখে, টিভি টাকে চালিয়ে নিজের
মনের সুখে কখনো খবর দেখতে থাকে তো
কখনো টক শো দেখে।
আর আমি? পাগলের মতো বক- বক করতে- করতে
ঘরটাকে আবার ঘুচিয়ে, রাগ করে শুয়ে পড়ি, কিন্তু
মানুষটা একবার তখন ও জিজ্ঞাসা করেনা --খাইছো তুমি
কিংবা
চলো দুজনে মিলে একটু ছাদ থেকে ঘুরে আসি,
বৃষ্টির মাঝে একটু ভিজি, কিংবা বারান্দায় বসে দুদন্ড কথা
বলি।
যদি আমি কখনো এমন আবদার করি তো মহাশয়
আমাকে মুচকি হাসি দিয়ে বলে উঠে --- আরে জুই
রাতে ছাদে যেতে নেই সেখানে ভুত থাকে,
আর তাছাড়া আমি বুড়ো মানুষ আমাকে ঠেলে
ফেলে দিতে পারে, আর বৃষ্টিতে ভিজলে সর্দি
লাগবে তোমার, পরে নাক থেকে বাচ্চাদের
মতে ময়লা বের হবে। আর বারান্দায়? একটা অট্রহাসি
দিয়ে বলে, তুমি জানো বারান্দায় কি মশা এতো বড়-
বড় ওগুলো যদি তোমায় কামড়ে দেয় তাহলে
তো তোমার ম্যালেরিয়া হবে। তখন আমি তো
আবার প্যারায় পড়বো।
কথাগুলো যখন শুনি গাপিত্তি সব জ্বলে যায়, মাথার
বালিশটাকে রাগে জনাবের মুখে মেরে অন্য
দিকে মুখ ফিরিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। কিন্তু ঘুমটাও আমার
কপালে জুটেনা, রাত ১ টা অবদি টিভির উচ্চ সাউন্ডে
কানটা পুরো জালাপালা হয়ে যায়, আর তারপর, জনাবের
ঘুম আসলে সেই মোটা নাকের নাক ডাকার শব্দে
সারারাত কখনো বসে থাকতে হয়তো, কখনো
আবার সোফায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি।
আর এই ভাবেই, এই কেয়ারলেস, অগোছালো
এন্ড আনরোমান্টিক পারসোনটার সাথে দেখতে-
দেখতে যে কিভাবে ৩ বছর পার করে দিলাম
নিজেও জানিনা, তবে মাঝে মাঝে মনে হয়, হয়তো
মানুষটাকে একটু বেশিই ভালোবাসি ফেলেছি তাইতে
ওর ভিতরে সব অপছন্দের জিনিসগুলো থাকা শর্তে
ও ওর সাথে তালমিলিয়ে চলতে শিখে গেছি।
--- এই জুই।
এমন মিষ্টি মধুর ডাকটা শুনে নিজের চিন্তার জগত
থেকে বাস্তবতায় ফিরে আসলাম, তারপর বিছানা
থেকে নিচে নেমে কাথা গোছাতে--
গোছাতে বলে উঠলাম--তা বুড়ো আজকে কোন
দিকে সূর্য উঠেছে।
--- স্যরি জুই সূর্য এখন ও উঠেনি আর উঠলে প্রতিদিন
যেই দিকে উঠে সেই দিকেই উঠবে। যাইহোক
শুনো আমি মসজিদে যাচ্ছি নামাজ পড়তে আর সাথে
একটু হেটে আসবো, তা হেটে আসতে--
আসতে ৬ টা বাজবে, তো আমি আসার সময় বাজারটা
করে আনবো।
কথাটা শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম জনাবের
দিকে, তারপর আচমকা কন্ঠে বললাম --- এই তোমার
শরীর ঠিক আছে তো।
--- হ্যা কেন।
--- না, মা, মা, মানে তুমি করবে বাজার? ইমপসিবল, যাকে
দিয়ে এই তিন বছরে একদিন ও একবার ও বাজার করাতে
পারলাম না, আর আজ সেই যাচ্ছে বাজারে ।
--- তুমি তো প্রতিদিন বাজার করো, মাছের গন্ধে,
লোকজনের ভিড়ে ধাক্কা খেয়ে, দোকানদারের
সাথে দরকষা কষি করে, অতঃপর বাজার নিয়ে আসও।
তাতে তো তোমার অনেক কষ্ট হয়, আমি না হয়
আজ তোমার সেই কষ্টের একটু ভাগ নেই,এই
বলে কপালে একটা চুমু দিয়ে ঘর থেকে বের
হয়ে গেলো। আর আমি গোয়েন্দার মতো
ভাবতে লাগলাম জনাবের এই পরিবর্তনের কারনটা কি,
আমি কি কোনো স্বপ্ন দেখছি নাকি বাস্তব।
নাহ আর ভাবতে পারছিনা।
এই চিন্তা ছেড়ে,
নামাজ পড়লাম, তারপর কিছুসময় বসে থেকে, রান্না
ঘরে ঢুকলাম, হঠ্যাৎ দেখি জনাব আমার বাজার নিয়ে
ঘরে ঢুকলো, বাজারের ব্যাগটা দেখে তো আমার
চোখগুলো বড় হয়ে গেলো, এতো কিপটা মানুষ
যে কিনা কখনো ২ টাকাও মানুষকে দিতে গেলে
১০ বার ভাবে সে আজ রুই মাছ, গরুর গোছ, বাজার
করে আনছে। বাজারের ব্যাগটা দেখে সাথে
সাথে জনাবের কাছে গিয়ে ওর কপালে হাত দিয়ে
বলে উঠলাম--- এই আমার মনে হয় তোমার জ্বর
আসছে।
--- মানেটা কি জুই।
--- না মানে বুড়ো, এই তিনবছরে জিবনে কখনো
তোমাকে বাজার তো করতে দেখিনি আর আমি
করলে যদি সপ্তাহ একদিনের বেশি ২ দিন আমিষ বাজার
করতাম, সেদিন তো তোমার বকা শুনতে- শুনতে
আমার দিন যায় আর সেই তুমিই আজ আমিষ বাজার করে
আনছো।
--- প্রতিদিন তো তুমি আমার জন্য নিরামিষ খাও, আজ আমি
না হয় তোমার জন্য আমিষ খাবো, আজ না হয় তোমার
জন্য একটু খরচ করলাম ।
আর শুনো আজকে আমি রান্না করবো, ঠিক আছে,
তুমি গিয়ে ড্রইং রুমে বসো, আমি তোমার জন্য নাস্তা
বানিয়ে আনছি।
--- অ্যা।
--অ্যা নয় বলো হ্যা, যাও।
মানুষটার হঠ্যাৎ এমন পরিবর্তন দেখে বারবার কেমন
জানি সবকিছু স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে, কি
হলো হঠ্যাৎ ওর, এই ভাবনার ঘোরে ড্রইং রুমে
গিয়ে বসে রইলাম।
কিছুসময় পর জনাব আমার জন্য পরটা আর ডিম বেজে
নিয়ে আনলো।
তারপর খাবারটা আমার মুখের সামনে নিয়ে এসে
বললো --- জুই আজ তোমাকে আমি খায়িয়ে
দিবো।
--- তু,তু,তু তুমি আমাকে খায়িয়ে দিবে?
--- কেন? তোমার কোনো সমস্যা আছে।
-- না মানে যে মানুষটা আমাকে কখনো ভুল করে ও
জিজ্ঞাসা করেনা, আমি খেয়েছি কিনা, সেই মানুষটাই
আজ আমাকে খায়িয়ে দিবে বলছে!
--- আমি তো তোমাকে কখনো জিজ্ঞাসা করিনি তুমি
খেয়েছো কিনা, কিন্তু তুমি তো আমাকে সবসময়
জিজ্ঞাসা করো আমি খেয়েছি কিনা, যদি বলি হ্যা, তখন
তুমি নিজে খাও। আজ না হয় আমি তোমাকে একটু
খায়িয়ে দেই।
কথাটি শুনতেই বুকের মাঝে একটা মৃদু হাওয়া বয়ে
গেলো, বিয়ের আজ এতো বছর স্বামী আমার
আমাকে কেয়ার করছে।
প্রথম যখন ওর হাত থেকে খাবারের লোকমাটা
মুখে নিলাম মনে হলো পৃথিবীতে এর চেয়ে
সুস্বাদু খাবার আর কোনোটাই নেই। কেননা এই
খাবারটার সাথে রয়েছে একরাশ ভালোবাসা। যেটা
পৃথিবীর শেষ্ঠ জিনিস।
সকালের নাস্তা শেষ করে, জনাবকে জিজ্ঞাসা
করলাম --- অফিসে যাবেনা?
--- না, আজ অফিস থেকে ছুটি নিয়েছি,।
--- কেন।
--- তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবো।
কথাটি শুনতেই আনন্দ মন শিহরিত হয়ে গেলো।
মানুষটিক ঝাপটে ধরো বললাম --- সত্যি।
--* হুম, যাও তুমি গোসল করে নেও আমি বরং
রান্নাঘরে যাই।
-ঠিক আছে।
গোসল করে বের হয়ে দেখি ও ঘরটাকে
ঘুচিয়ে পরিপাটি করে রেখেছে, যে প্রতিদিন
ঘরটাকে জামাকাপড়ের গোডাউন বানিয়ে রাখতো
সেই আজ ঘর ঘুচিয়ে রেখেছে, তোয়াল দিয়ে
চুলের পানি মুছতে-- মুছতে বলে উঠলাম--- তোমার
আজ কি হয়েছে বলোতো?
সে আমার প্রশ্নটাকে উপেক্ষা করে , বরং
আমাকে বলে উঠলো --- জুই, ভেজা চুলে
তোমাকে দারুণ দেখায়,আর এই সৌন্দর্যটাকে
উপভোগ করা থেকে আমি এতোদিন বিরত ছিলাম।
আমি তখম বললাম --- বাবা তোমার আজ হলো কি
বলোতো। বউয়ের দিকে যে ঠিক করে তাকায়ও
না সে আজ বলছে ভেজা চুলে আমায় দারুণ
লাগছে। এতো রোমান্টিক কেন আজ?
--- প্রতিদিনেই তো আনরোমান্টিক থাকি আজ না হয়
তোমার জন্য একটু রোমান্টিক হলাম তাতে ক্ষতি কি।
আজ মানুষটার প্রত্যেকটা কথায় কেন জানি ভালোবাসাটা
খুজে পাচ্ছি। তিন বছরে এই প্রথম মানুষটিকে এতো
রোমান্টিক হতে দেখেছি
--- এই জুই কি ভাবছো
--- না, কিছু না।
--- আচ্ছা জুই তুমি এই ক্ষেত মার্কা কালারের শাড়িটা
পড়ছো কেন।
--- বাবা! এটা তোমার কাছে আজ ক্ষেত কালার হয়ে
গেলো, অথচ এই কালারটাই তোমার খুব পছন্দের
বলেই আমার সব শাড়ি, জামা এই কালারের।
ও তখন আমাকে বললো--- তুমি একটু ওয়েট
করো, এই বলে আলমারি থেকে একটা গিফটের
প্যাকেট আমার হাতে তুলো দিয়ে বলে উঠলো
--- এই নাও।
---কি এখানে।
--- শাড়ি।
--- শাড়ি! আমার জন্য, তুমি আনছো।
--- হ্যা।
--- বিশ্বাস করতে পারছিনা, এই তুমি আমাকে একটা চিমটি
কাটোতো।
--- জুই।
--- ওকে, আমি খুলে দেখছি।
এই বলে প্যাকেটটা খুলতেই দেখি লাল পারের
গোল্ডেন কালারের কারুকাজ করা একটি জামদানি শাড়ি,
শাড়িটি দেখে চোখে মুখে আনন্দের বর্ষা
যেনো নেমে আসলো, চোখের
কোনেটা খুশীর স্পর্শ একটু ভিজে গেলো।
মানুষটি তখন আমার সামনে এসে জলটা মুছতে থাকে
আর বলতে থাকে ---- এতো সুন্দর চোখে
কখনো জল মানায়না।
-- আমার চোখ সুন্দর তুমি বলছো বুড়ো।
--হ্যা, সুন্দরেই তো, আর কাজল দিলে আর ও সুন্দর
লাগবে। যাও গিয়ে রেডি হয়ে নাও আর শুনো
তোমার জন্য একগুচ্ছ ফুল এনে রেখেছি মাথায়
খোপা করে তার মধ্যে গেঁথে দিও, বেশ
দেখাবে তোমায়।
ওর কথা মতো পাশের রুমে গিয়ে মনের মতো
সাজলাম, চোখে গাড় করে কাজল,ঠোঁটে লাল-
খয়রী লিপস্টিক, আর চুলে একগুচ্ছ বেলি ফুলের
বাহার, তারপর শাড়িটি পড়ে আয়নার পানে তাকাতেই মন
বলে উঠলো --- বেশ দেখাচ্ছে তবে যার জন্য
সাজলাম তার কি ভালো লাগবে, কেননা সে সবসময়
আমাকে বলে-- আমার চোখ নাকি পেচার মতো
তাই কবে যে শেষ বার চোখে কাজল দিয়েছিলাম
ভুলেই গেলাম, আর ঠিক করে কখনো আমায়
দেখেনা বলে সেই বিয়ের পর আর ঠিক করে
কোনোদিন এতো সুন্দর করে সেজেছি কিনা
মনে নেই।
-- জুই, এই জুই কই হলো তোমার।
ও ঘর থেকে জনাবের গলার আওয়াজ পেয়ে
তাড়াতাড়ি ওর কাছে গেলাম, গিয়ে দেখি সেই গত
বছরে ওর জন্মদিনে ওকে যেই গোল্ডেনের
কাজ করা নীল কালারের পান্জাবীটা দিলাম সেটা
পড়েছে, এই পান্জাবীটা ওকে জন্মদিনে গিফট
করেছি বলে আমাকে কতইনা বকলো, এখন ও
মনে আছে, ক্ষেত বলে কত অপমান করে
আলমারিতে পান্জাবীটা রেখে দিলো ভুল করে ও
কখনো খুলে দেখেনি একবার ও। আর আজ সেই
পান্জাবীটা পড়েছে, বেশ দেখাচ্ছে, মুখ ফুটে
বলতে হয়েছে --- আবার আজ আমি তোমার
প্রেমে পড়লাম, রিয়ান।
---আমার কথাটি শুনে হা করে আমার দিকে চেয়ে
রইলো কিছুক্ষণ, তারপর বলে উঠলো --- কত বছর
পর তোমার মুখে আমার এই নামটা শুনলাম জুই,
তোমাকে আজ আবার বউয়ের মতো লাগছে। চল
নিচে চলো, দুপুরের খাবারটা খেয়ে তোমাকে
নিয়ে বাইরে যাবো।
--- বাইরে! তুমি আমায় নিয়ে যাবে।
-- হুম।
--- কোথায়।
--- প্রথমে তোমাকে নিয়ে সিনেমা দেখবো
তারপর তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবো।
কথাটি শুনতেই আনন্দ গিয়ে মানুষটাকে জড়িয়ে
ধরলাম। তারপর বলে উঠলাম *-- আমার কত শখ ছিলো
তোমার হাত ধরে ঘাসের উপর হাটবো, তোমার
কাধে মাথা রেখে তোমার সাথে কথা বলবো আর
আজ,আমার সেই স্বপ্ন পূরন হচ্ছে।
দুপুরের খাবার খেয়ে কিছুক্ষণ রেষ্ট নিয়ে
বিকেল ৪ টায় বাড়ি থেকে বের হলাম, তারপর সিনেমা
দেখতে গেলাম, আমার বুড়ো হ্যাজবেন্ড এই
প্রথম আমার সাথে বসে রোমান্টিক ছবি
দেখেছে।যা আমি এখন ও বিশ্বাস করতে পারছিনা।
যাইহোক
সন্ধ্যে ৬ টায় হল থেকে বের হয়ে যখন বাড়ি
ফেরার জন্য আমি ব্যস্ত হলাম তখন ও আমার হাতটা
ধরে বললো ---চলো তোমায় আজকে একটা
জায়গায় নিয়ে যাবো।
--- কোথায়।
ও তখন বললো--- গেলেই দেখতে পাবে, এই
বলে শক্ত করে আমার হাতটা ধরে আমাকে গাড়িতে
উঠালো তারপর, নিজে গাড়ি চালাতে শুরু করলো।
বাইরে মৃদু হাওয়া বয়ে চলছে, আকাশে বৃষ্টি - বৃষ্টি
ভাব এই ওয়েদারে ওর পাশে বসে ওর কাধে মাথা
রেখে কল্পনার রাজ্যে যাওয়ার আমার অনেকদিনের
শখ আজ পূর্ণতা পেলো, বারবার মন বলছে --- এই
সময়টা যেনো শেষ না হয়,কিন্তু সময় কি আর আমার
কথা শুনে, আর সুখকর সময় গুলো বুঝি একটু তাড়াতাড়িই
শেষ হয়ে যায়।
গাড়ি থেকে নামতেই চারদিকে ধূ-- ধূ, গাছপালা,
একপাশে নদী, আর একটু নিবু-- নিবু আলোয় , দূরে
একটি টেবিল দেখা যায়। তার উপরে একটা কেক, আর
কেকটার চারপাশে গোলাপের পাপড়ি। এতো সুন্দর
দৃশ্য দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছি প্রায়, অবাক
দৃষ্টিতে ওর পানে তাকাতেই দেখি ও নিচু হয়ে বসে
আমার দিকে চেয়ে রয়েছে, আমি ও তখন
আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম --- এসব কি?
ও তখন আমাকে বললো --- Happy Anniversary.
এই শব্দটা শুনে
ব্রেনটাকে তখন রিফ্রেশ করতেই মনে পড়লো
--- ও আমি তো ভুলেই গিয়েছি, আজ তো
নভেম্বর মাসের ২০ তারিখ, এই দিনেই তো
বুড়োটার সাথে আমি সারাজিবনের মায়ার বাধনে বাধা
পড়লাম। আর আমিই ভুলে গেলাম আর ও মনে
রাখলো।
--- কি হলো কি ভাবছো।
--- এটা তুমি তো।
-- হুম, তো কি আমার ভুত।
--- না, মানে তোমার এতো পরিবর্তন।
--- দেখো জুই, বিয়ের পর থেকেই তুমি আমার
মতো আনরোমান্টিক, কেয়ারলেস আর
অগোছালো মানুষটার সাথে নিজেকে মানিয়ে
নিয়েছো, অথচ আমি কখনো তোমার পছন্দের
সাথে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করিনি , কিংবা তোমাকে
গুরুত্ব দেইনি। বিয়ের পর কখনো কোনো
ওকেশনে, কিংবা কোনো স্পেশাল দিনে
তোমাকে কিছু গিফট করিনি। ইভেন আমাদের First
Anniversary টাও আমি মনে রাখতে পারিনি, সেদিন
রাতে যখন ১১ টায় বাসায় ফিরলাম, অভিমানে তখন তুমি
আমার সাথে একটু কথাও বলোনি, অথচ আমি
কেয়ারলেস পারসোনের মতো, তোমার
অভিমানটাকে গুরুত্ব না দিয়ে নিজের মতো শুয়ে
পড়েছি তাও তুমি কখনো আমার উপর কোনো
অভিযোগ করোনি। বরং আমার সাথে মানিয়ে নিয়ে ৩
টা বছর পার করেছো আসলে ভালোবাসা তো
সেটাই যে ভালোবাসার মানুষের ভিতরে নিজের
অপছন্দের জিনিসগুলো থাকা শর্তে ও সবকিছুকে
মেনে নিয়ে তার সাথে হাতে- হাত রেখে পথ চলা।
যেটা তুমি প্রতিটি পদেপদে প্রমান করেছো। কিন্তু
কি জানো ভালোবাসা মানে দুজন -- দুজনার প্রতি
আত্মত্যাগ, যেটা তুমি অনেক আগে করোছো,
কিন্তু আমি কখনো করিনি।
তবে আজ আমি না হয় তোমাকে আমার পরিবর্তনটা
গিফট করে আমার ভালোবাসাটাকে শুদ্ধ করলাম।
ওর কথাগুলো শুনে সুখে চোখ থেকে জল
গড়িয়ে পড়লো, আজ সত্যিই মনে হচ্ছে ওকে
পেয়ে আমি সত্যই অনেক লাকি।
আলতো করে ওর হাতটাকে ধরে বলে উঠলাম --
তোমার অগোছালো তা,কেয়ারলেসটাকে যে
আমি ভালোবেসে ফেলেছি, আজ সারাদিন যে
এতো সুখকর সময়ের মাঝে ও আমি আমার সেই
অগোছালো হ্যাজবেন্ডটাকে খুঁজেছিলাম,কারন
আমি তো একটা কেয়ারলেস,আনরোমা ন্টিক আর
অগোছালো ছেলেকে ভালোবেসেছি, এমন
পরিপাটি ছেলেকে নয়।
আমার কথাগুলো শুনে ও তখন মুচকি হাসি দিয়ে বলে
উঠলো,
--- তাহলে পাগলি কালকে থেকে আবার
আনরোমান্টিক হয়ে যাবো ।
-- মানেটা কি, অগোছালো হয়ো, বাট প্লিজ
আনরোমান্টিক হয়োনা , বুড়ো।
--- আমি এখন ও বুড়ো।
-- আরে না বুড়ো, এই স্যরি রিয়ান।
আমার কথাটি শুনে অট্রহাসি দিয়ে মানুষটি আমার হাতটাকে
শক্ত করে ধরে বললো--- চলো, কেকতো
কাটতে হবে।
আমি ও তখন ওর হাতটাকে আকড়ে ধরে, ওর সাথে
পা মিলিয়ে সামনে এগোতে লাগলাম, আর ভাবতে
লাগলাম --- এই হাতটাকেই শক্ত করে আকড়ে ধরে
মৃত্যু অবদি পৃথিবীর মাঝে একরাশ ভালোবাসা নিয়ে
মানুষটির সাথে দিনগুলো পার করে দিবো। কেননা
সময় হয়তো বদলে যেতে পারে, সিশুয়েশন
হয়তো কখনো ভালো তো কখনো খারাপ হতে
পারে কিন্তু ওর প্রতি আমার যে ভালোবাসা তা
কখনোই পরিবর্তন হবেনা।
ভালো লাগলে কমেন্ট করে জানাবেন, তাহলে আরও ভালো ভালো গল্প নিয়ে আপনার সামনে হজির হব ।
ভালো লাগলে কমেন্ট করে জানাবেন, তাহলে আরও ভালো ভালো গল্প নিয়ে আপনার সামনে হজির হব ।
0 comments:
Post a Comment