ইবু বাইরে গিয়ে সবার সামনে বলে দিল আমাকে তার পছন্দ হয়নি।আমি খুব জোরে একটা শক খেলাম।অপমানিত বোধ করছিলাম।বাবা দায়িত্ব দিয়েছিল আমাকে। কিছুই হলো না। ছেলের মা বলল
-কিন্তু, বাবা কেন পছন্দ হয়নি?
-কোনো কারণ নেই মা।চলো যাওয়া যাক।
তারপর সবাই চলে গেল।আমি তো অবাক!মা কোনো কথাই বলল না।
ক্রিংক্রিং ক্রিংক্রিং ক্রিংক্রিং....
-হ্যালো প্রাপ্তি। তোমাকে দিয়ে কোনো কাজই কি ঠিকভাবে হয়না!
-বাবা, আসলে আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি।কিন্তু... ....
-আচ্ছা ঠিকাছে, এখন বিয়ের প্রস্তুতি নাও।
-মানে.....বুঝলা ম না
-তুমি কি কিছুই বুঝতে পারোনা? মানে উনারা বিয়েটা এইমাসেই সেরে ফেলতে চান।আমিও সামনের সপ্তাহে চলে আসবো।
-বাবা আমি........
-ঠিকাছে বাকিটা আমি তোমার মা কে জানিয়ে দেব।
কল কেটে দিল......
আমি পুরো ব্যাপারটা বুঝলাম যে ইবু শুধু আমাকে অপমান করার জন্য এখানে না বলেছে।কিন্তু বাবাকে আসল কথা মানে হ্যাঁ বলে দিয়েছে।কিন্তু আমি এটা বুঝলাম না বিয়েটা কি সত্যিই আমি করব!এমন একটা ছেলেকে!আমি তো সবসময় এটাই ভাবতাম যে আমার বর আমার কথায় উঠবে আর বসবে।কিন্তু এই ছেলে তো আমার মাথার উপর দিয়ে যায়।হাহ........
বাবা চলে এসেছে। আমরা বিয়ের শপিং এ ব্যস্ত। এর মধ্যে ইবু একবারও আমার সাথে দেখা করেনি।দেখা তো দূরের কথা আমার সাথে ফোনেও কথা বলেনি।সে নাকি বিয়ের আগে আর আমার সাথে কথা বলতে চায় না। আমারও কথা বলার কোনো ইচ্ছা নাই হুহ.......।যত্ত সব ঢঙ্গি ছেলে।এরমধ্যে অবশ্য ইবুর বাবা, মা এসেছিল।আংটি পরিয়ে গেছে।ইবুর মা অনেকক্ষণ আমার সাথে গল্প করেছিল,সে সত্যিই খুব ভালো। এমন ভালো মায়ের অমন কুলাঙ্গার ছেলে বিশ্বাস করতে সত্যিই কষ্ট হয়।
বিয়ের দিন চলে এসেছে।সকাল থেকে বাড়িতে মানুষের এত্ত ভীড়।কারা এরা!!!কাউকেই তো চিনিনা!পার্লারে র লোক এসে আমাকে সাজালো। কিন্তু আমার সাজ পছন্দ না হওয়ায় তা ধুয়ে ফেলেছি।কেমন জানি কার্টুন এর মতো লাগছিল।তবে মেহেদি দেওয়া খুবই সুন্দর হয়েছে।এর মধ্যে শুনলাম বর নাকি এসে পড়েছে। বিয়েও সম্পন্ন হয়ে গেল।এরপর আমাকে রুমে নিয়ে আসা হলো।একটু পর আমি শ্বশুর বাড়ি চলে যাবো।এখনো আমি একবারও ইবুকে দেখলাম না।
কিছুক্ষণ পর আমি একটা ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে আছি।বেশ বাতাস।রাত হয়ে যাওয়ায় জায়গাটা শান্ত।আসলে আমি আমার গাড়িটা নিয়া পালিয়ে আসছি।হি হি হি।এতক্ষণে নিশ্চয়ই ইবুর বউ হারিয়ে গেছে দেখে ইবু শোকাহত।হি হি হি।অনেক মজা লাগতাছে😂😂।যাই হোক আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম একটা ছেলে এসে আমার পাশে দাঁড়াল।
-আপনি কি বিয়ে থেকে পালিয়ে এসেছেন?
-হ্যাঁ।
-বিয়েটা হওয়ার পর নাকি আগেই?
-না বিয়ে তো করে ফেলেছি।
-গাড়ি নিয়ে পালিয়ে এসেছেন!
-হ্যাঁ,মানে আমাকে যেন খুঁজে পায় তাই😁ফোনটাও নিয়ে আসছি।কিন্তু কল রিসিভ করছি না।😆
এর মধ্যেই কোত্থেকে ইবু চলে আসছে।আর এসেই ছেলেটাকে মারা শুরু করল।আমি তো কিছুই বুঝলাম না।তবুও কোনো মতে ইবুকে থামালাম।ছেলেটা হতভম্বের মতো দাঁড়াইয়া আছে।ইবু আমার দিকে ঘুরে বলা শুরু করল,
-কি মনে কর তুমি নিজেকে?বিয়ে করে কেন পালিয়ে আসছ।বিয়ের আগে পালিয়ে আসতা।এই ছেলে তোমার প্রেমিক আমাকে বললেই হতো।আমি কি তোমাকে বিয়ের জন্য জোর করেছিলাম!
এইবার আমি কান্না করে দিলাম।
-আমি কি আপনার সাথে সংসার করব না বলে পালিয়ে আসছি।আমি তো রাগ হয়ে পালিয়ে আসছি।আপনি আমার সাথে একবারও দেখা করলেন না,কথাও বললেন না।আপনি তো প্রতিশোধ নেওয়ার জন্যে আমাকে বিয়ে করলেন।আর এই ছেলেকে তো আমি চিনিই না।বেচারাকে শুধু শুধু মারলেন আপনি।এখন সব বুঝছি আমি।এখনি আমাকে ডিভোর্স দেন।তাড়াতাড়ি।
-ছেলেকে সত্যিই চিনোনা?তোমার প্রেমিক না?
-এমন হইলে তো বিয়ের আগেই পালাইতাম,বিয়ের পরে কেন পালাবো!আমি একটু ফাজলামি করছি বলে আপনি আমার সাথে এমন করলেন!😭😭
ছেলেটাকে ইবু সরি বলল।ছেলেটা বেশ ভদ্র তাই ইবুকে কিছু বলল না।
-ঠিকাছে ভাই, বুঝতে পারছি।কিন্তু মেয়েটা কিন্তু আপনাকে ভালোবাসে।এইজন্য ই তো গাড়ি আর মোবাইল নিয়ে পালাইছে। হা হা হা...তারপর ছেলেটা চলে গেল।
এইবার ইবু আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল,আর কান্নাকাটি কইরো না, তোমার ফাজলামির জন্যই তো তোমাকে এত্ত ভালোবাসি।তুমি আমার সাথে ফাজলামি করছিলা তাই আমিও তোমার সাথে একটু ফাজলামি করলাম।
এইবার আমি আরো জোরে কান্না করে দিলাম,কিন্তু ইবুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।
0 comments:
Post a Comment