বাসায় গিয়ে কলিং বেল বাজালাম আর মা এসে দরজা খুলে দিল,,,
- জ্বী বাবা তুমি কে?
- হোয়াট?
- এখানে কি চাও?
- মা আমি নীল।
- আমার ছেলের নাম তুমি জানলে কি করে?
- উফফফ, আমিই তোমার ছেলে নীল।
- আমার ছেলে তো আমাকে না জানিয়ে বাসায় আসে না।
- যাও তো ঢুকতে দাও। ( জোর করে ঘরে ঢুকলাম)
- পাগল ছেলে,, এভাবে না জানিয়ে আসলি কেন?
- সারপ্রাইজ।
- সত্যি করে বল বলছি,,
- তুমিও না,,,, খালার বাসায় যাব।
- হইছে এবার বুঝছি।
- কি বুঝছো?
- এতো দিন পর সেই পুতুল খেলা বউটার কথা মনে পরছে।
- মানে!!!!
-প্রেমার সাথে দেখা করতে যাবি?
- ওর সাথে দেখা করে আমি কি করবো?
- বিয়ে করা বউয়ের সাথে দেখা করে কি করবি মানে!!!!
- বউ????
- ছোট বেলায় যখন বউ জামাই খেলতি তখন তো বউ বলেই ডাকতি।
- মা য়য়য়,,,, ও আমার বড়, আমার আপু হয়, ওকে বউ করবো কেন?
- আইচ্ছা,,, গিয়ে যখন ওকে দেখবি তখন এ কথা মনে থাকলেই হলো,,,
- ফ্রেস হয়ে আসি খাবার দাও,, কাল সকালেই যাব ওখানে। আর কি সব উল্টো পাল্টা ভাবো, যত্তোসব।
.
হুম, ফ্রেস হতে গেলাম। বাসায় এসে একটু দাড়াতেও পারলাম না, মন মেজাজ গরম করে দিল।
.
বিকেলে বাসায় আসলাম তাই খেয়ে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
তারপরের দিন সকাল ১০টায় রওনা হলাম ওদের বাসার দিকে,,
.
স্টান্ডে এসে নামলাম,,
একটু ভেতরে যেতেই আমার বাতি নিভে গেল,,, চিনতে পারছি না কিছু,, সব চেন্জ হয়ে গেছে এ কয় বছরে,, এখন কি হবে?
.
ওয়াও,,, এতো সুন্দর পরী,, আমার সামনে দিয়ে এগিয়ে আসছে ধীর পায়ে ফোন টিপতে টিপতে। কেউ এতো সুন্দর হতে পারে? ক্রাশ)
ধ্যাত, চিনি না জানি না, এভাবে কেউ কারও উপর ক্রাশ খায় নাকি,,
.
যাচ্ছে যাক, আমার এতো ক্রাশ খেয়ে কাজ নেই,,,
অতঃপর আমি মাথা নিচু করে পরী কে অতিক্রম করতে লাগলাম,,
আর হটাৎ কে যেন আমার কলার ধরে দিল এক টান,,
মাথা উচুঁ করতেই দেখি, ওই পরী আমার কলার ধরে আছে আর আমার দিকে রাগী লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে।
.
- জ্বী আপু, এটা কি হলো আমার কলার ধরলেন কেন?
- এইতো ভদ্র ছেলে, আমাকে সবসময় আপু বলবি আর আপনি করে বলবি, এখন চল আমার সাথে।
- এমমমম মানে, কই যাব আপনার সাথে?
- আমার বাসায়।
- একি আমি আসছি খালার বাসায় আর আমি আপনার সাথে যাব কেন? আপনি কে?
- আরে হনুমান, তোর খালাই আমার আম্মু।
- হোয়াট, তার মানে তুই প্রেমা?
- ওই তোকে না বলছি আপনি করে বলতে।
- ধুর, বউকে কেউ আপনি করে বলে নাকি? ( মার কথা বোধ হয় সত্যি হয়ে গেল,,,, ও মা তোমার ছেলে প্রেমে পরে গেছে গো, তাও আবার ১ বছর সিনিয়র মেয়ের)
- এই দ্যাখ ভালো হবে না কিন্তু। আগের কথা ফেলে দে, এখনকার কথা ভাব,, আর এখন আমার সাথে চল।
- ওকে।
- আর আমাকে এখানে আসছি এটা জানলি কেমনে?
- তোর আম্মু বলে দিছে ফোন করে তুই এখানে আসছিস আর আমার আম্মু জানতো তুই কিছু চিনতে পারবি না তাই আমার আম্মু আমাকে জোর করে এখানে পাঠিয়ে দিছে।
- জোর করে মানে? জোর করে না পাঠালে তুই আসতি না?
- দরকার কি?
- ওহ্,, তাইতো,, দরকার কিসের আবার। ( মনটা খারাপ হলো)
- হু, জোরে হাট,
- আমাকে চিনলি কেমনে?
- ফোনে সব বলে দিছে তোর বর্ণনা। আর তোর কাছে কি থাকবে সেটাও ,তোর এই নীল ব্যাগ, নীল শার্ট প্যান্ট,, সব শুধু নীল আর নীল।
- আমার নামটাই নীল,, তাই সবকিছু নীলই রাখি সবসময়।
- হুম,
.
তার পর খালার বাসায় চলে এলাম ওর সাথে।
বিশ্রাম নিতে লাগলাম বিছানায় শুয়ে,,, ভাবলাম,,, ওর তো অনেক পরিবতর্ন আসছে, এখন বেশী মিশতে চায় না। রেগে কথা বলে। আর খুব শক্ত ও, ওকে যেকোনো ভাবে গলাতেই হবে। নাহলে ওকে হারাতে হবে।
.
তিনটা বাজে,, তাই খেয়ে নিয়ে প্রেমার ঘরে গেলাম।
.
গিয়ে দেখি ম্যাসেঞ্জারের শব্দ " তার মানে ও ফেসবুকে চাটিং করছে কার সাথে, হুম, দেখতে হবে ব্যপার টা, যেই উকি দিলাম ওমনি আমাকে দেখে ফেললো,,
.
- এই তুই এখানে কি করিস?
- চল একটু ঘুরতে যাই।
- আমি পারবো না, তুই একা যা।
- চল না, লক্ষী বউ আমার।
- মুখ সামলে কথা বলবি।
- কেন?
- ভুলেও আর বউ বলবি না।
- কেন?
- আমি তোর বউ নাকি? আমাকে আপু বলবি।
- বলবো না কি করবি? তুই আমার বউ বউ বউ।
- যা এখান থেকে ( চিৎকার দিয়ে)
- ওকে,,
( চিৎকার শুনে খালা আসলো)
.
- নীল কি হইছে?
- দেখো না খালা ওকে বললাম ঘুরতে নিয়ে যেতে কিন্তু ও যাবে না।
- তোর ফোন কিন্তু ভেঙে দিব প্রেমা, সবসময় ওটা নিয়ে পড়ে থাকিস, আর ছেলেটা এতো দিন পর আসলো,, ঘুরতে নিয়ে যা বলছি,,
.
- আচ্ছা যাচ্ছি যত্তোসব।
.
তারপর দুজন মিলে ঘুরতে বের হলাম। অনেক দূর এসে পড়ছি তবুও একটা কথা বলিনি,, কথা বললেই বিপদ হবে, কারণ ও এখন আমার উপরে এমনিতেই খুব রেগে আছে।
.
ফুরফুরে বাতাস বইছে চারদিক দিয়ে হাটতে খুব ভালো লাগছে। এখন যদি ওর হাত টা ধরে হাটতে পারতাম তাইলে আরও ভালো হতো।
হটাৎ কিসের যেন শব্দ হলো, পেছনে তাকিয়ে দেখি প্রেমা মাটিতে বসে আছে,,
.
দৌড়ে ওর কাছে গেলাম। গিয়ে দেখি পা অনেক টা কেটে গেছে, আর রক্ত পড়ছে। দেখে খুব কষ্ট হলো,,,
- এসব কি করে হলো?
- ওখানে পেরেক ছিলো আর জুতা ছিদ্র হয়ে পায়ে লেগে গেছিল।
- দেখে চলতে পারস না?
- ওটা দেখলে তো আর পা দিতাম না।
- হইছে হইছে, ( পকেটের রুমাল টা দিয়ে বেধে দিলাম)
- এখন বাড়ি যাব কেমনে? বাইক নিয়ে আয় যা।
- বাইক না আমি ওই কলাগাছের ভেতর থেকে প্লেন নিয়ে আসছি।
- এমন করে বলছিস কেন?
- কলাগাছের ভেতর বাইক পাব কই?
- তাইলে আমি যাব কি করে এখন?
- ওয়েট,,, ( কোলে তোলে নিলাম)
- নীল ভালো হবে না কিন্তু, ছাড় বলছি ছাড়।
- রাস্তা পর্যন্ত যেতে দে।
- একটুও দরকার নেই, আমি যেতে পারবো।
- ছাড়বো না, আজকে আমার বউকে কোলে নিয়েছি ছাড়বো কি করে?
- ঠাস,, এরপরও ছাড়বি না? ছাড় এবার।
- মারলি কেন?
- ছাড়তে বলছি,
- তোর রাস্তা পর্যন্ত যেতে কষ্ট হবে, তাই এতদূর আমিই নিয়ে যাই।
- তোকে আমি,,,, লজ্জা করে না তোর? আমি তোকে বকলাম মারলাম তবুও লজ্জা করে না?
- বউয়ের কাছে কি কেউ লজ্জা পায়।
- হারামজাদা,,
- গলা টা ধর তো,
- ( ইচ্ছা না থাকতেও বাধ্য হয়ে প্রেমা আমার গলা ধরলো)
.
তারপর বড় রাস্তার পাশে যেতেই নামিয়ে দিলাম আর আমাকে রেখেই একটা রিক্সা নিয়ে চলে গেল। আর আমি উঠতে চাইলে দুইটা ঝাড়ি দিয়ে নামিয়ে দিল। কি আর করবো, একা হেটেই গেলাম।
.ছোট হইছি তাতে কি হইছে ভালবাসা নিজেই আদায় করে নিব।
.
তারপর বাসায় গিয়ে দেখি বিছানায় শুয়ে আছে আর এখনো রুমাল টা ওর পায়ে আছে। আমি গিয়ে কিছু বললাম না, রুমাল টা খুলে ফেললাম,, আর ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দিলাম কিন্তু কিছু বললো না, অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিল শুধু।
তার পরের দিন,, সকালে দেখি হাটতে বের হইছে বাইরে ঘাসের উপর দিয়ে। একটু খুড়িয়ে হাটছে, মনে হয় এখনো একটু ব্যথা আছে।
0 comments:
Post a Comment