বউ, আরে ও বউ। বলি এই অবসরপ্রাপ্ত
কোলবালিশটাকে আবার কেন আমাদের মাঝে হাজির
করেছো? এটাকে সরাও না তাড়াতাড়ি। (আমি)
- খবরদার যদি কোলবালিশে হাত দাও তাহলে কিন্তু হাত
ভেঙ্গে দেব। (আনিকা)
- হে হে তাহলে তো ভালই হবে। তুমি নিজের
হাতে খাইয়ে দিবে।
- উহ আমার ঠেকা। তোমাকে খাওয়াতে যাবো
কোন দুঃখে?
- দুঃখে খাওয়াবে কেন? সুখে খাওয়াবে।
- দেখো বকবক না করে ঘুমাও। আমাকেও ঘুমাতে
দাও।
- তাহলে এই কোলবালিশটা মাঝখানে থেকে সরাও।
- বললাম না কোলবালিশ এখানেই থাকবে।
- বউ এমন করো কেন? আমার কিন্তু সেইরকম
শীত লাগছে। কম্বলের নীচেও কাঁপাকাঁপি শুরু
হয়ে গেছে।
- তো আমি কি করবো?
- তুমি কোলবালিশটা সরিয়ে আমাকে একটু........।
- উফ তুমি চুপ থাকবে নাকি এখন তোমার গায়ে পানি
ঢেলে দিতে হবে?
- উরে বাবা এই শীতে পানি? না থাক কোলবালিশ
সরাতে হবেনা আর আমাকে জড়িয়েও ধরতে
হবেনা, হুহ।
..
এতক্ষন কথা হচ্ছিল আনিকা, মানে আমার একমাত্র
বউয়ের সাথে। আজ রাতে যখন বিছানায় ঘুমানোর
প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম তখন আমার ব্যাচেলর জীবনের
সঙ্গী কোলবালিশটাকে আবার বিছানায় দেখে
রীতিমত চমকে উঠলাম।
এই কোলবালিশটা আমার বিয়ের রাতেই অানিকা উঠিয়ে
রেখেছিল। সেদিনের কথা আমার স্পষ্ট মনে
আছে। কোলবালিশ সরানোর প্রতিবাদ করতে
গিয়েছিলাম আমি। সেদিন আনিকা বলেছিল 'আজকে
থেকে আর কোলবালিশের দরকার নেই,
কোলবালিশের বদলে আমি তো আছি।
কোলবালিশের বদলে আমাকেই নাহয়....।'
কথাটা বলতে গিয়ে আনিকা লজ্জায় লাল হয়ে
গিয়েছিল।
আজ হঠাৎ কোলবালিশটাকে দেখে অবাক হওয়াটাই
স্বাভাবিক। আর যদি অবাক না হতাম তাহলে হয়তো এটা
পৃথীবির অষ্টম আশ্চর্যে পরিনত হতে পারতো।
..
কোলবালিশের রহস্যটা ধরতে পারলাম একটু পরেই।
আমার আদরের বউ আমার উপর চরম পরিমানে রাগ
করেছে। যার ফলে কারফিউ জারি করা হয়েছে।
আগামী এক সপ্তাহ নাকি এই কোলবালিশ আমার আর
আনিকার বিছানার মাঝখানে থাকবে। আনিকাকে
ছোঁয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে।
কিন্তু হঠাৎ কেন এই অবিচার তা এখনো জানতে
পারলাম না। প্রতিদিন আনিকাকে বুকে জড়িয়ে ঘুমাতে
ঘুমাতে অভ্যাসের ফলে আজ আর আমার ঘুম
আসছে না। কারণ আনিকা আর আমার মাঝখানে যে
দেয়াল হয়ে আছে এই কোলবালিশ। নাহ আর
ভাল্লাগে না।
..
- ও বউ তুমি এমন করছো কেন আজকে? হঠাৎ
করে বিনা ঘোষনায় হরতাল দেওয়ার মানে কি? (আমি)
- ওই কথা বলতে নিষেধ করলাম না তোমায়? আবার
কথা বলো কেন? (আনিকা)
..
ধূর আর ভাল্লাগে না। এই শীতের রাতে বউ ছাড়া
কেমনে কি? একই বিছানায় একই কম্বলের নিচে
আছি দুইজন, কিন্তু ছুঁতে পারবো না। এমন অন্যায়
সহ্য হয়?
বিছানা ছেড়ে উঠে বসলাম। বাতি জ্বালিয়ে পানি
খেলাম। অানিকা তখন দেয়ালের দিকে মুখ করে
শুয়ে আছে।
পানি খেয়ে বাতি নিভাতে গেলাম। তখন হঠাৎই
ক্যালেন্ডারে চোখ পড়তেই অবাক, হতবাক,
আবুল, বাবুল সব একসাথে হয়ে গেলাম। আজ ১২
জানুয়ারি। হায় হায়! আজতো আনিকার জন্মদিন।
এখন সবকিছুই স্পষ্ট হয়ে গেছে। কি কারনে হঠাৎ
এই কারফিউ আর কি কারনে এই কোলবালিশের
অাবির্ভাব তা মূহুর্তেই বুঝে গেলাম।
আজ আনিকার জন্মদিন, এই কারনেই হয়তো সকালে
কাজে বের হওয়ার সময় আমাকে একটু তাড়াতাড়ি বাসায়
ফিরে আসতে বলেছিল।
নিজের মাথার চুল নিজেই ছেঁড়ার চেষ্টা করলাম।
কিন্তু ব্যাথার কারনে আর চুল ছিঁড়তে পারলাম না।
পাঁচ বছর প্রেমের পর আমাদের বিয়ে হয়েছে।
ওই পাঁচ বছরে আমি একবারও ওর জন্মদিনের কথা
ভুলিনি। কিন্তু বিয়ের প্রথম বছরেই ভূলে গেলাম?
..
- আনিকা, ঘুমিয়ে গেছো নাকি? (আমি)
- (কোন সাড়া শব্দ নেই)
- ও আমার আদরের বউ রাগ করো কেন? আমি সরি,
আসলে কাজের চাপে তোমার জন্মদিনের
কথা.......।
- তাহলে যাও তুমি তোমার কাজ নিয়েই থাকো।
আমার কাছে আসছো কেন? (আনিকা)
- জান পাখিটা এদিকে আসো তোমাকে একটা পাপ্পি
দেই তাহলে দেখবা রাগ কমে যাবে।
- দেখো আমার মেজাজ খারাপ করবা না বলে দিলাম।
..
আনিকা কম্বল মুড়ি দিয়ে আবার শুয়ে পড়লো। তারপর
অনেক ডাকাডাকি করলাম, কিন্তু শুনলো না।
মাথাটা পুরো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এখন সব রাগ গিয়ে
পড়ছে ওই কোলবালিশের উপর। মনে চাচ্ছে
কোলবালিশটাকে চিবিয়ে খেয়ে ফেলি।
আচ্ছা কোলবালিশের ভেতরে তো তুলা থাকে।
তুলা খেতে কেমন লাগে কেউ জানেন? যদি
কেউ জেনে থাকেন তাহলে আমাকে জানাতে
ভুলবেন না।
..
ঘরের মধ্যে পায়চারি করছিলাম। হঠাৎ করেই বাম
পায়ের পেশিতে একটা চরম টান দিল। মনে হলো
এই বুঝি শিরাটা ছিঁড়ে যাবে। এর আগেও মাঝে মাঝে
এমন হতো। এইসময় চরম যন্ত্রনা হয়। তবে
আজকের মত এমন যন্ত্রনা আর কখনো হয়নি। বাম
পা বাঁকা হয়ে আসছে।
ব্যাথা সহ্য করতে না পেরে ও মাগো করে চিৎকার
করে উঠলাম। আর আমার এই চিৎকার শুনে আনিকা
ধড়ফড় করে কম্বলের থেকে লাফিয়ে উঠলো।
আমি ততক্ষনে মেঝেতে সটান হয়ে বসে
পড়েছি।
..
- এই আরমান কি হয়েছে তোমার? (আতংকিত
কন্ঠে)
- নাহ কিছুনা। তুমি যাও ঘুমাও। (আমি)
- দেখি দেখি কি হয়েছে? (আনিকা)
আনিকা তখন আমার পা সোজা করায় ব্যস্ত। আনিকার
চোখে তখন উৎকন্ঠা।
আমি মনে মনে এতক্ষনে এই সুযোগটাই
খুঁজছিলাম। এবার আনিকাকে ক্ষেপানোর পালা।
- আনিকা তুমি আমাকে ধরলা কেন? (আমি)
- কি হয়েছে ধরলে হুম? (আনিকা)
- ওমা তোমার মনে নাই? তুমিই তো বললা যে
একসপ্তাহ তোমাকে ছোঁয়া নিষেধ।
- তোমাকে কিন্তু এইবার সত্যিই পানি দিয়ে ভিজিয়ে
দিব বেশি কথা বললে।
- হুহ
- এখন সোজা হয়ে দাঁড়াও।
- পারি না তো। একটু ধরে উঠাও না জানু।
- হুহ ঢং দেখো। ঠিক আছে এবার উঠো আমি
ধরছি।
- উম্মাহ আমার লক্ষী জানু।
- এই এইটা কি করলা?
- কই কি করলাম?
- তুমি না একটা......।
- আমি একটা কি?
- বদের হাড্ডি।
- হুম আর তুমি একটা বদের মাংস। হাড্ডি আর মাংস সবসময়
একসাথে থাকে। হি হি
- ঢং করবা না একদম। সারাদিন বউয়ের খবর রাখে না
আর এখন ঢং করতে আসছে। হুহ
- আমি সরি বললাম তো, আমি তো ইচ্ছে করে
ভুলিনি।
- হয়েছে হয়েছে সবই বুঝি। পুরোনো হয়ে
গেছিতো তাই আর এখন আমায় ভাল লাগেনা।
(কাঁদো কাঁদো কন্ঠে)
- এইটা কি বললা তুমি? তুমি জানো না আমি তোমায়
কতো ভালবাসি। হুদাই এইসব কথা কেন বলো।
- হুহ ভালবাসো না ছাই। বিয়ের আগে রাত বারোটা
বাজার আগে আমাদের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে
আমাকে উইশ করার জন্য। আর এখন মনেই থাকে
না।
- সরি বললাম তো বউ আমার। এখন কি ঘুমাবা নাকি সারারাত
এমন করবা?
- তোমাকে ঘুমাইতে মানা কে করছে?
- তুমিই তো ঘুমাইতে দিচ্ছো না। এই কোলবালিশ
মাঝখান থেকে সরাও।
- পারবো না। ওইটা এখানেই থাকবে।
- জানু এমন কেন করো? কোলবালিশটা সরাই?
- আগে বলো ভালবাসো তো এখনো?
- অনেক বেশী পরিমানে।
- সত্যি?
- হাজার সত্যি।
- আমার বার্থডে উইশ?
- আমি তোমাকে আমার বাবুর আম্মু বানাতে চাই। তুমি
কি রাজি জানু?
- এইটা কি হইলো?
- বার্থডে উইশ।
- যাও কোলবালিশ সরাবো না।
- কোলবালিশ থাকুক। তুমি আমার বুকের উপর ঘুমাও,
আসো।
- নাহ আসবো না।
..
মুখে না বললেও ঠিকই আনিকা আমার বুকে মাথা
রেখে শুয়ে পড়লো। এভাবেই ওকে বুকে
আগলে রাখতে চাই।
0 comments:
Post a Comment