: আমাকে জড়িয়ে ধর
উপরের কথা টি শুনেই চমকে যায় আইমান।
এলাকার নাম করা ভদ্র ছেলে আইমান। সারাক্ষন বইয়ের মধ্যে মুখ গুঁজে থাকে।ঘুম খাওয়া দাওয়া সব টেবিলেই হয় তার। কোথাও গেলে নিচের দিকে তাকাই তাকাই যায় আবার আসে। অন্য কোনো দিকে তাকায় না। তার জীবনে সে সব চেয়ে বেশি ভয় পায় তেলাপোকা কে। ভার্সিটি তে সবাই তাকে নিয়ে মজা করে কিন্তু সে কখনই কাউতে কিছু বলে না। সোজা ক্লাসে যায় আবার ক্লাস থেকে বাসাই চলে আসে । বাবা মা বুঝতে পারে না কি করবে ওকে নিয়ে।সে এতই ভিতু যে 1st দিন একটা মেয়ের সাথে ভুলে ধাক্কা লাগাতে মেয়েটা রেগে যায় আর আইমান মেয়েটার রাগ দেখে ভয়ে কান্না করে দেয়। সেদিন মেয়েটি কিছুই বলতে পারে নি।
অন্যদিকে এলাকা নাম করা সুন্দরি চঞ্চল মেয়ে নিশি। যেমন শয়তান তেমনি রাগী ,তেমনি জেদি। তার মামা ছিলো সেই এলাকার মেয়র যার কারনে কেউ কাছে ঘেসার সাহস পেত না। নিশির যখন যা ইচ্ছা তাই করতো।
মাতিয়ে রাখত পুরো ভার্সিটি।
বেশির ছেলেই তার দিকে তাকিয়ে থাকতো।যা তার অসহ্য লাগতো। তাদের ডিপর্টেন্ট একমাত্র একটা ছেলেই ছিলো যে কিনা কোনো মেয়ের দিকে তাকাতো না। সে হলো আইমান। দেখতো তাকে নিয়ে সবাই মজা করলেও সে কিছু বলে না।
নিশি একসময় তাকে ভাবতে শুরু করে। এরপর একদিন ওর সাথে কথা বলতে যায় ।
তাকে দূর থেকে ডাক দেয়...
আইমান তাকিয়ে দেখে প্রথম দিনের জল্লাদ মেয়েটি। সে আর কিছু না ভেবে জোরে হাটা দেয় ...
:- যেভাবে হোক ওর কাছ থেকে কেটে পড়তে হবে( মনে মনে) আইমান
নিশি আরও কয়েকবার ডাক দেয় কিন্তু আইমান ফিরেও তাকায় না বরং আরও জোরে হাটে। নিশির খুব রাগ উঠে। আইমানের নাম ধরে জোরে চিল্লানি দেয়। আর আইমান ভয়ে জুতা খুলে ভোঁ দৌড় দেয়। এক দৌড়ে ঘরে।
ওর দৌড় দেখে নিশির যে এত হাসি পায়...। ওই চিত্রটা যখনই মনে পড়ে তখনই খুব হাসে নিশি।
ভয়ে রাতে আইমানের জ্বর উঠে যায়...
:- কিরে বাবা! "" এত ভয় পাচ্ছিস কেন?? ( আইমানের আম্মু)
:- মা মা জানো? ? আমাদের ক্লাসে একটা জল্লাদনী আছে(আইমান)
:- তাই বুঝি?? তো সে কি করে??
:- কেমন করে আমাকে দেখে.. আবার আজকে আমাকে দৌড়ানি দিছিলো..
:- কেন? ?
:- হইতো আমাকে খাওয়ার জন্য..
:- হা হা হা হা (আইমানের আম্মু হাসতে হাসতে চলে যায়)
এরপর আইমান জ্বরের জন্য এক সপ্তাহ ক্লাসে যেতে পারে নি। এদিকে নিশি ওকে ভার্সিটি তে না দেখে চিন্তায় পড়ে যায়। বুঝতে পারে যে ওকে নিশি ভালোবেসে ফেলেছে। ওকেই নিশির দরকার।
7 দিন পর দেখলো আইমান ভার্সিটির গেইট দিয়ে ঢুকতেছে...
আইমান ওকে দেখেই অন্যদিকে চলে যেতে চাই কিন্তু নিশি তার হাত ধরে ফেলে..
: কই যাও?? ( নিশি)
: না মানে আমার ক্লাস আছে(আইমান)
: আজকে ক্লাস করবা না
:- কেন?
:কেন মানে ? আমি বলছি তাই করবা না
: (আইমান নিচের দিকে চলে যেতে চাইলে)
: এখান থেকে এক পা নড়লে পা কেটে রেখে দিবো, দৌড়ানোর সুযোগ পাবা না ( কঠোর কন্ঠে)
:- (এটা শুনে আইমান ওখানেই পড়ে যায়)
:- (নিশি হাসঁবে নাকি কাদঁবে বুঝতে পারে না)
:- (একটু পর আইমানে জ্ঞান ফিরলে চোখ খুলে দেখে নিশি ও নিশির বান্ধবিরা তাকে ঘিরে আছে)উঠে দাড়ায়
এরপরই নিশি ওকে প্রোপজ করে সবার সামনে। সবাই তো হা। নিশির বান্ধবিরা বলাবলি করতেছিল নিশি পাগল হই গেল নাকি??
আইমান সরে যেতে চাইলে নিশি বলেবলে
:- বলছি না এক পা নড়লে পা কেটে রেখে দিবো(নিশি)
:- আমাকে ক্ষমা করে দিন আপু। আমি আপনার কোনো করি নাই। প্লিজ আপু
:- আপু???????
:- সরি। তাহলে আন্টি আমাকে মাফ করে দিন। প্লিজ
:- কি ?? আমি তোর আন্টি??? তোর তো মাফ নাই।
:- প্লিজজজ।(আইমান ভয়ে কেদেঁ দেয়।)
:- আমাকে একসেপ্ট করবি?? নাকি পা কেটে রেখে দিবো??
:- কি.... কি... ক..ক.. করতে হবে?
:- আমাকে একসেপ্ট করো???
:- আইমান না পারতে নিশি থেকে ফুল গুলো নেয়।
:- তোমার ফোন নাম্বার দাও( নিশি)
:- কে.. কে.. কেন?? ( আইমান)
:- নাম্বার না প্রেম করবো কি দিয়ে??
:- না করলে হয় না???
:- কি বললাহ??? (রেগে)
:- কিছু না। নেন। 018............ .....
এরপর থেকে নিশিই আইমানকে কল দেয় । সব খবরা খবর নেয়। অনেক কেয়ার করে।
আইমান খুব ভয় পায় নিশিকে।
নিশি আইমানকে মাঝে মাঝে ক্লাস করতে দিতো না ঘুরতে যায় এদিকে ওদিকে, ফুসকা খায়। আইমান কিছু করতে পারে না ভয়ে ভয়ে মাথা নিচু করে হাটঁতো।।
সবাই হা করে তাকায় তাকে তাদের দিকে।
একদিন কিছু ছেলে আইমান কে নিয়ে মজা করতেছিলো। নিশি ভার্সিটি আসতেই দেখতে পায় সেটা। একটা ছেলে আইমানের শার্ট ধরে টান দেওয়ার সাথে সাথে জোরে শব্দ হয়ে উঠে
:- ঠাসসসসসসসসসস... ..
আইমান ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে। কিন্তু সে ভাবে তার কোনো গাল জ্বলতেছে না তাহলে থাপ্পর সে খাইনি। চোখ খুলে দেখে শার্ট টান দেওয়া ছেলেটার গালে গাঢ় আঙ্গুলের ছাপ স্পস্ট দাগ। পাশে নিশি দাড়াই আছে। এরপর নিশি আইমানের হাত ধরে সেখান থেকে নিয়ে আসে। আইমান একটা চিপস কিনে চিপস খাচ্ছিলো
:- তোমাকে নিয়ে এই রকম করে তোমার কখনো রাগ হয় না?? ( নিশি)
:- না মানে রাগ হয়..মা... মা... মানে হয় না( আইমান)
:- এত ভয় পাও কেন কি হইছে??
:- (চুপ)
:- কি হলো? ??( বিরক্ত হয়ে)
:- (চুপ)
:- কি হলো কথা বলবা?? (রেগে)
:- কি বলবো??
আর না পেরে নিশি ওর হাত থেকে প্যাকেট টা কেড়ে নিয়ে আইমানের মাথায় সব চিপস ঢেলে দিয়ে হন হন করে বাসাই চলে যায়।
নিশি রাগ দেখালেও মনে মনে আইমানকে প্রচন্ড ভালোবাসতো। নিশির ভয়ে আইমানের সাথে কেউ মজা করতে পারতো না। আইমানে ভয় পাওয়ার মূহুর্ত গুলো নিশিকে খুব হাসায়।
এইভাবে কেটে যায় তিন মাস। আইমানও নিশি ভালোবাসে কিন্তু ভয় পাৃয খুব।
ওরা ফোনে একটু একটু কথা বলে । সব সময় নিশিই ফোন দেয় আইমান কখনও ভুলেও ফোন দেয় না। নিশি ফোন দিলেও আইমান কিছুই বলে না .... প্রত্যেকবার নিশি রেগে যায়.. আর আইমান ভয়ে ফোন টা কেটে দেয়। এরকম একদিন..
:- তোমার কি কখনো ফোন দিতে ইচ্ছে না? (নিশি)
:- হুমম ( আইমান)
:- কি হুম? ? বাংলা বলতে পারো না?
:- হুমম
প্রচন্ড রেগে যায় নিশি
:- কি হুমম? ? বাংলা বলতে পারছ না। আর কল কাটলে কাল সকাল হওয়া আগে তোর মাথা কেটে আমার হাতে থাকবে
:- কি বলবো? ?
:- কোনো হুম হাম নাই কথা বলবি
এটা বলার সাথে সাথে কল কেটে যায় নিশির বেলেন্স শেষ হয়ে যাওয়ার কারনে। এদিকে আইমান তো শেষ।ভয়ে তার মার কাছে চলে যায়।
:- মা মা ওই জল্লাদনী মেয়েটা বলছে আমার গলা কেটে ও নিয়ে যাবে। (আইমান)
:- হা হা হা। তোমার সাথে মজা করলেও তুমি বোঝো না ( বাবা মা দুজনই হাসে)
:- মা ও না সব পারে আমাকে খালি বকে।
:- ওকেই ঘরের বউ করে নিয়ে আসবো যেন তোকে ঠিক করে।
:- মা তুমিও পচাঁ
এটা বলে চলে আসে আইমান
আইমান ধরে কালকে ও শেষ। নিশি ওর কেটে ফেলবে।
পর দিন ভার্সিটিতে নিশি দেখেই আইমান দৌড় দেয়। কিন্তু নিশি ধরে ফেলে ..
আইমান নিশির পা ধরে ফেলে বলে..
:- আপু আমি গতকাল কল কাটি নাই। আমাকে ক্ষমা করে দেন। কেমনে কেটে গেছিলো আমি জানি না ( আইমান)
নিশি তো প্রচন্ড লজ্জায় পড়ে যায়।
তাড়াতাড়ি আইমান দাড় করায়..
:- আরে আমার বেলেন্স শেষ হয়ে গেছিলো হাদারাম কোথাকার(নিশি)
এটা শুনে আইমান যেন নতুন জীবন ফিরে পায়।
:- আর আমি তোর আপু লাগি??(নিশি)
:- না। ভয়ে মুখ দিয়ে কি বের হয়ছে যানি না(আইমান)
:- আর আপনি করে বলো কেন??
:- এমনি
:- আজকে থেকে যেন আর আপনি করে না শুনি
:- হুমম
:- বুঝছো??
:- হুমমম
:- একথাপ্পর দিয়ে দাত 43 টা ফেলে দিবো আবালের বলদ কোথাকার(রেগে)
:- হুমম। ওহ না সরি সরি।
নিশি আর না পেরে হন হন করে বাসাই চলে যায়।
এটা তাদের প্রতিদিনের রুটিন।
আইমানও নিশিকে ভালোবাসে অনেক কিন্তু ভয় পায়। নিশি ভাবে সে আইমানকে কখনও পাল্টাতে পারবে না। শুধু শুধু পড়ে আছে ওর পিছনে।
এরপর দিন আইমান ভার্সিটি যায় কিন্তু নিশি আসে নাই। অনেক্ষন বসে থেকেও যখন আসে না তখন মন খারাপ করে বাসাই চলে যায় । যাওয়ার সময় দেখে নিশি একটা ছেলের সাথে রিকশায় হাসাহাসি করছে। আইমান নিশি কে ফোন দেয় কিন্তু ফোন বন্ধ। মন খারাপ করে চলে যায় বাড়িতে সে বিভিন্ন ভাবনা ভাবতে থাকে। তাহলে নিশি ওর সাথে নাটক করলো??
পরদিন নিশি ভার্সিটি এসে ওর বান্ধবির সাথে কথা বলতেছিলো। আইমান গিয়ে ওর সামনে দাড়ায় এবং জিজ্ঞাসা করে
:- গতকাল আসো নাই কেন আর ফোন বন্ধ ছিলো কেন? (আইমান)
:- আইইইই হাইইইই। আমার আইমান তাহলে আমাকে খুজছে আমাকে ফোন ও দিছে?? ( অভাক হয়ে)
:- (চুপ)
নিশির মাথায় দুস্টু বুদ্ধি আসলো
:- জানো? ? কালকে আমি আমার নতুন বয়ফ্রেন্ড কে নিয়ে ঘুরছি। অনেক মজা করছি।
:- (আইমান আর কিছু না বলে মাথা নিচু করে চলে আসতে থাকে আর ভাবে আমি যেটা ভাবলাম সেটায় সঠিক হলো)
কতটুকু গিয়ে নিশি আইমানের পথ আটকে দাড়ায়।
:- গতকাল আসার সময় ফোন হাত থেকে পড়ে নষ্ট হয়ে যায় আর রিকসায় সেটা আমার খালাতো ভাই।(নিশি)
:- ওহ (আইমান)
:- আমার ভিতু টা তাহলে আমাকে ভালোবাসে??
:- হুমম।
:- শাস্তি তো তোমাকে পাইতে হবে এটার জন্য
:- (আইমান ভয় পেয়ে যায়)
কারন কয়দিন আগে একজনে নিশি কে প্রোপোজ করছিলো আর ভার্সিটি থেকে বের করে দিছিলো।
নিশি আইমানের শার্টের কলার ধরে পাশের এক পুকুর পাড়ে চলে যায়।
নিশি দেখে আইমান থরথর করে কাপঁতেছে
:- কি হইছে এত ভয় পাচ্ছো কেন? (নিশি)
:- তুমি আমাকে মেরে ফেললে(আইমান)
:- আজকে তোরে মেরে খাবো আমি
:- না। আমি আমার আম্মু কে বলে দিবো
নিশি হাসবে নাকি কাদবে বুঝতে পারে না
:-তোমাকে আমি কত ভালোবাসি বোঝো না?(নিশি)
:- হুম
:- আবার ?? (রেগে)
:- বুঝি তো
:- তো সেটা বললে কি হয়??
:- হুমম
প্রচন্ড রেগে যায় নিশি
:- আসো আমাকে জড়ায় ধরো (নিশি)
কথা টি শুনেই চমকে উঠে আইমান। ভয়ে আরও বেশি কাপঁতে থাকে।
:- কি হলো ধরো?? (নিশি)
:- হুমমম
নিশি আর রাগে থাকতে না পেরে ধাক্কা দিয়ে পুকুরে ফেলে দিয়ে হন হন করে বাসাই চলে যায়।
এরপর দিন ভার্সিটি গিয়ে আইমান কে পায় না নিশি অনেকবার কল দেয় আইমানকে কিন্তু ফোন বন্ধ।
আইমানের কোনো ফ্রেন্ড ছিলো না তা কেউ জানেও না তার খবর।
কে একটা বললো তার নাকি কি হয়েছে। নিশি সেটা শুনে দৌড়তে দৌড়তে আইমানের বাসায় চলে যায়।
বাসায় গিয়ে দেখে কেউ নাই। কিন্তু সব খোলা। নিশি সোজা বাসায় ঢুকে যায়। এক রুমে আইমানের ছবি দেখে বুঝতে পারে আইমানের রুম। টেবিলের ডয়ারে দেখে সব নিশির ফেসবুকে আপলোড
করা ছবি গুলো। আর একটা ডাইরি। ডাইরি কোনো জায়গা ফাকা নেয়। সব জায়গায় নিশির নাম লেখা
নিশি কে আমি খুব ভালোবাসি
নিশি আমার খুব খেয়াল
নিশি কে আমি খুব ভয় পায়
নিশি যখন রাগে তখন ওকে অনেক সুন্দর লাগে তাই ওকে রাগাই।
নিশি আমাকে খুব ভালোবাসে পাগলি টা আমার.........
এগুলো দেখে নিশির আনন্দে কান্না চলে আসে।
মনে মনে বললো আসুক হাদারাম টা। অপেক্ষা করতে থাকে.
ঠিক তখনই আইমানের বাড়ির কাজের লোক বললো আইমানের accident হয়েছে .
কথা শুনে বিস্বাস করতেন পারছিলোনা
নিশি তারাতারি হসপিটালে চলে যায়
গিয়ে দেখে আইমানের বাবা মা কান্না করতেছে তার সাথে নিশির বাবাও.
নিশি দৌড়ে গিয়ে তার বাবাকে বললো কী হয়েছে.
নিশির বাবা বলে আইমান তার গাড়ির সেথে accident হয়েছে.
এই কথা শুনে নিশি sence হারিয়ে ফেলে
যখন sence ফিরলো আইমান ওর পাশে বসে কান্না করতেছে.
নিশি শক্তকরে জরিয়ে ধরে আইমানকে .
ঠিক তখনেই আইমানের বাবা মা আর নিশির বাবা চলে আসে
একে অপরকে ছাড়িয়ে দেয় আর লজ্জা পায়.
আইমানার বাবা বলে চলেন বিয়াই সাহেব বিয়ের দিন ঠিক করি ............... ............... .............
ভালবাসা এমনেই হয়
0 comments:
Post a Comment